সৈকত মিস্ত্রী

নির্বাচন সমাপ্ত। রেজাল্ট বেরতে কয়েক ঘন্টা বাকি।তারই মধ্যে নানা চ্যানেল, সংবাদপত্র একজিট পোল, বুথ ফেরত সমীক্ষা সেরে নিয়েছে বলে দাবি করছে।শুধু দাবি নয়, সেসব তারা প্রকাশও করছে। এই ফলাফলে কেউ আনন্দিত, কেউ ক্ষুব্ধ। এই সব সমীক্ষার পদ্ধতি, মেথডোলজি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এই সমীক্ষাকে ‘চুলের’ গণনা বলে নস্যাৎ করছেন।দেখা গিয়েছে, অতীতে এইসব সমীক্ষা কখনও ঠিক হয়েছে, কখনও ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং এগুলিকে অনুমান বলে এড়িয়ে যাওয়া যেত। অপেক্ষা করা যেত আরও কয়েক ঘন্টা। কিন্তু এই তথ্যকে মান্যতা বা অস্বীকার করার এত মরিয়া চেষ্টা কেন? যা ঘটার সে তো ঘটে আছে। এবার তার মাঝে যান্ত্রিক কারসাজির প্রসঙ্গটা তোলা থাক। সে সম্ভবনা থেকে যায়। শাসকের ফন্দি ফিকির আর রাষ্ট্রশক্তির নিয়ন্ত্রণ সবার থেকে বেশি, সেটা কে না জানে!!
তাহলে, আমরা এই কাল্পনিক বা পদ্ধতি নির্ভর সম্ভাব্য সংখ্যাতত্ত্বকে অস্বীকার বা প্রমাণ করার জন্য এতটা উত্তেজিত হচ্ছি কেন? এই সমীক্ষা ঠিক বা ভুল, কত বার অতীতে ফেল করেছে বা পাশ, এ একেবারে ব্যবহারিক দিক। আর এই ব্যবহারিক দিকের অতিরিক্ত আর একটা দিক হল নিজ নিজ বিশ্বাসের জগৎ। আমি আপ্রাণ ভাবে চাই না বিজেপি সরকার গড়ুক, সুতরাং বিজেপির পক্ষে সম্ভাব্য কোনও ফলই আমার বিশ্বাসে আঘাত করবে। আমাকে উত্তেজিত করবে। করছেও তাই। আমি চাইছি তৃণমূল জিতুক, কিন্তু সমীক্ষা সেই সম্ভাবনাকে আলোকিত করছে না, আমার বিশ্বাসে আঘাত লাগে বইকি। ধরুন আমি ভাবছি, চমৎকার বিহারে জোট ঘোট পাকিয়ে দু একটা সাংসদ ধরা যাক এবার। তা করতে বামপন্থীদের হত্যাকারী শক্তির সাথে হাত মেলালেও, আপ্রাণ ভাবে চাইছি, সংসদীয় গণতন্ত্র ক্ষমতার উৎস – এই ভাবনার বিপরীতে যে কোনও মতই আমাদের ক্ষুব্ধ করতে পারে। করছেও তাই। আসলে হ্যাঁ না এর অনিশ্চয়তায় যেখানে মীমাংসা সম্ভব নয়, সেখানে কাজ করে বিশ্বাস। নিজ নিজ বিশ্বাস। যার বিপরীত মত, বিশ্বাস আমরা মানতে পারি না।
আর একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো, মানুষ আসলে তাৎক্ষণিকতায় প্রভাবিত। অমুককে ভোট দিলে আগামীতে কি অসুবিধা হবে, গ্যাসের দাম কতটা বাড়বে, গণতন্ত্র আদৌ থাকবে কি? তা নিয়ে তত ভাবিত নয়। চোখের সামনে যে তাৎক্ষণিক অনাচার সে লক্ষ্য করে, তারই নিরিখে তার মনে তাৎক্ষণিক বিশ্বসের জন্ম দেয়। আর সাময়িক ইমপলাস্ই ভোট দানে প্রভাবিত করে বলেই মনে হয়। মধ্যশ্রেণি, জীবনে নিরাপত্তা যাদের কিছুটা আছে তাঁরা যতটা হিসেবি, তার থেকে অনিরাপদ অংশের মানুষ অনেক বেপরোয়া আর ইমপালসিভ্। তাঁদের হিসেবপত্রগুলোও সাময়িক ভাবনা ও লাভ- অলাভেই চালিত হয়। হয়ত এমনটা হয়। হয়ত বিষয়টি আদৌ এমন নয়। নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। সবটাই অনুমান। এই অনিশ্চয়তা, সম্ভাব্যতার আগাম সমীক্ষা, পাটিগণিত কতটা ঠিক হবে কতটা ভুল – সেটা সময় বলবে। কিন্তু এই সংখ্যাতত্ত্বের আগাম গণনায় আমার ক্ষোভ বা প্রশান্তি আমার বিশ্বাসকে তুষ্ট করতে পারছে কিনা, তার উপর আধারিত শেষঅবধি এগুলিকে গ্রহণ না বর্জন করব।

132 Views