ওয়েব ডেস্ক : আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগরে ‘মেয়েদের ডাকে সকলের মিছিল’-এ দলীয় রাজনীতির প্রকাশ ঘটল। রবিবার সন্ধ্যায় এই মিছিল থেকে সুবিচারের দাবির পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও উঠল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবির সঙ্গে মিলে গেল এই মিছিলের আওয়াজ। আর এটা দেখেই প্রশ্ন উঠল যে, এই মিছিল কি সকলের মিছিল? আরজি কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিয়ে পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল বিপুলসংখ্যক মহিলা-সহ অগণিত সাধারণ মানুষ। গত ১৪ আগস্ট মেয়েদের রাত দখল প্রতিবাদ আন্দোলন সারা দেশে আলোড়ন ফেলে। রাজ্যের বাইরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ও বিদেশেও এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সরব হয় বহু মানুষ। আরজি কর-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সুবিচারের দাবিতে এবং তাদের সুরক্ষার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করছেন। আদালতের নির্দেশে নৃশংস এই ঘটনার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের শাসকদলও এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি ও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছে। অন্যদিকে, একধাপ এগিয়ে এই নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের দায়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হুঙ্কার ছেড়েছেন, ‘দফা এক দাবি এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’। এই দাবিতে আগামী ২৭ আগস্ট ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ব্যানারে নবান্ন অভিযানের ডাকও দেওয়া হয়েছে। এদিন নবান্ন অভিযানের ডাক না দেওয়া হলেও বিরোধী দলনেতার সুরে সুর মিলিয়ে ‘সকলের মিছিল’ থেকেও শ্লোগান দেওয়া হয়েছে ‘দফা এক দাবি এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’।

প্রসঙ্গত, গত ৯ আগস্ট আরজি করের এই নৃশংস ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদে ফেটে পড়েন চিকিৎসকরা। সুবিচার, দোষীদের কঠোর শাস্তি এবং তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে সেই থেকে কর্মবিরতি জারি রেখে লাগাতার বিক্ষোভ আন্দোলন করছেন তারা। পাশাপাশি রাজ্যজুড়ে পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে বিপুলসংখ্যক মহিলা, অগণিত সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়ারাও। সবার মূল দাবি সুবিচার। শ্লোগান একটাই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। এদিন ‘মেয়েদের ডাকে সকলের মিছিল’-এ ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ শ্লোগানের পাশাপাশি শ্লোগান ছিল ‘দফা এক দাবি এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’। তিলোত্তমার বিচার চাই, দোষীদের বিচার চাই, আড়ালকারীদের ছাড় নাই, বর্বরতার বিচার চাই – ব্যানারে মেয়েদের ডাকে সকলের মিছিলে আক্রমণের অভিমুখ ছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর শ্লোগানের প্রতিধ্বনিও শোনা যায় এই মিছিলে। যদিও এই মিছিলে স্থানীয় বাম নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেলেও বিজেপি শিবিরের লোকজন ছিল না বলেই খবর। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রচুর মহিলা ও পুরুষ এদিন মিছিলে যোগ দেয়। যদিও ‘সকলের মিছিলে’ চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি, দুর্নীতির তদন্তের দাবি বা দ্রুত তদন্তের দাবি করে কোনও শ্লোগান ছিল না। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের আশঙ্কা, মেয়েদের ডাকে সকলের মিছিলে’ কোনও দলের ব্যানার না থাকলেও এর পিছনে রয়েছে বামফ্রন্ট বা বিজেপি শিবিরের লোকজন। ফলে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করার লক্ষ্যে নৃশংস এই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডকে বাম-বিজেপি হাতিয়ার করছে বলে তাদের অভিমত। তাদের দাবি, এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের যে আগুন জ্বলে উঠেছিল তা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, এই নিন্দনীয় ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি যথাযথ নয় উল্লেখ করে সম্প্রতি প্রবীণ নকশাল নেতা শৈলেন ভট্টাচার্য প্রকৃত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেন। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিও জানান। পাশাপাশি রাজ্যে একটি পূর্ণ সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিয়োগের দাবি জানান তিনি। অন্যদিকে, প্রতীকী আন্দোলন জারি রেখে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার জন্য আবেদন করেন শৈলেন ভট্টাচার্য।

113 Views