সংবাদদাতা : গাইঘাটার মধুসূদনকাটী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির প্রাঙ্গণে রবিবার উদ্বোধন হলো প্রয়াত কিরণবালা সরকার স্মৃতি মরণোত্তর দেহদান ও চক্ষুদান অঙ্গীকার সহায়তা কেন্দ্রের। অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন কালীপদ সরকার। উদ্বোধনী সংগীত “অন্ধজনে দেহ আলো…” পরিবেশন করেন কল্পনা পাল। এই কেন্দ্র স্থাপনের প্রেক্ষাপট ও গোবরডাঙা মছলন্দপুর অঞ্চলে এই আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরেন ডা. তাপস সরকার। এরপর, প্রয়াত বিশ্বনাথ রক্ষিত স্মৃতি কক্ষের দ্বারোদ্ঘাটন করেন ‘গণদর্পণ’ কলকাতার সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত সাহা রায়। প্রসঙ্গত, স্ব-শিক্ষিত নিরক্ষর কিরণবালা সরকার আজ থেকে আড়াই দশক আগে টিপসই দিয়ে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে টিপসই দিয়ে মরণোত্তর দেহদানের এটি প্রথম ঘটনা। ২০০২ সালের তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর চক্ষু ও দেহ পরিবারের পক্ষ থেকে দান করা হয়েছিল।
১৯৯৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত, অঙ্গীকারবদ্ধ মোট ২১টি মরণোত্তর দেহ ও আশি জোড়া চক্ষু বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ এবং চক্ষু ব্যাঙ্কে দান করা হয়েছে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আগামী দিনে এই আন্দোলনের গতি প্রকৃতি এবং জনগণের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন গণদর্পণের সম্পাদক সুদীপ্ত সাহা রায়। এছাড়া, মছলন্দপুর বিজ্ঞান চেতনা মঞ্চের সম্পাদক তপন বিশ্বাস তাঁদের সংগঠনের বহুমুখী কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করেন। পুরুষ ও মহিলা-সহ মোট ১১ জন মরণোত্তর দেহদাতা ও ২৫ জন মরণোত্তর চক্ষুদাতা পরিবারকে এদিন স্মারক দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
উল্লেখযোগ্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন দীর্ঘদিনের সমাজকর্মী ও বিজ্ঞান লেখক সুরেশ কুন্ডু। তিনি দেহদান আন্দোলনের প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনা করেন। এই আন্দোলনের সংকট, বাস্তব সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন তহমীনা খাতুন স্মৃতি রক্ষা কমিটির পক্ষে তহমীনার সহযোদ্ধা সাংবাদিক সুকুমার মিত্র।
গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ বাপী দাস জনগণকে আরও বেশি যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রীতিলতা শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক আশীষ চক্রবর্তী। এছাড়াও বারাসাত ‘গণ ল্যাবরেটরি’র সহায়তায় আয়োজিত বিনা ব্যয়ে স্বাস্থ্য শিবিরে তিনশোরও বেশি মানুষের চোখ, সাধারণ চিকিৎসা, স্ত্রী রোগ, হৃদরোগ ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ ই.সি.জি ও রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সবশেষে, এই মানবিক আন্দোলনে সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পশ্চিমবঙ্গ রক্তদাতা সমিতির সম্পাদক পবিত্র কুমার মুখোপাধ্যায়।