অমর চক্রবর্তী, মছলন্দপুর
‘বাজে তাক দুম তাক দুম বাজে বাংলাদেশের ঢোল সব ভুলে যাই তাও ভুলিনা……’। ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি এই গান। আর শুনেছি পুজো মন্ডপে ঢাকের বোল। যদিও ঢাক বা ঢোল যাঁরা বাজান তাদের কোনও কালেই তেমন সম্মানের চোখে দেখা হতো না। অথচ এই পেশাতেই ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে পথচলা শুরু তাঁর। বাবার প্রেরণায় ঢাকের কাঠিতে বোল তুলতে শুরু করেছিলেন মাত্র চার বছর বয়সেই। ধীরে ধীরে রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে ঢাকি শিল্পী হিসেবে নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। অবশেষে ভারতের শ্রেষ্ঠ পদ্মসম্মান পদ্মশ্রী উপাধি পেয়ে স্বপ্নপূরণ ঘটলো মছলন্দপুরের ঢাকি গোকুল চন্দ্র দাসের।
ঢাকি সম্রাট বাংলার মুখ উজ্জ্বল করে বাড়ি ফেরার পরেই উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলো গোটা এলাকা। বিভিন্ন সময়ে এই ঢাকি সম্রাটকে দেখা গিয়েছে রিয়েলিটি শোতে ঢাক-সহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজাতে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মছলন্দপুরের বিধানপল্লীর বাসিন্দা ঢাকি সম্রাট গোকুল চন্দ্র দাস। পদ্মসম্মান ২০২৫ পদ্মশ্রী প্রাপকের তালিকায় নাম উঠে আসে মছলন্দপুরের এই ঢাকি সম্রাটের। পরবর্তীতে আজ ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার বাড়িতে ফেরেন তিনি। ট্রেনে করে মছলন্দপুর স্টেশনে নামতেই উচ্ছ্বাসে মেতে পড়েন মছলন্দপুর এলাকার আপামর জনগণ। ফুলের মালা, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে তাকে সংবর্ধনা জানানো হয়। উপস্থিত ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জনস্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ অজিত সাহা। ঢাকি সম্রাট গোকুল চন্দ্র দাসের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে মছলন্দপুর স্টেশন পদযাত্রা করে মছলন্দপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে বাড়িতে পৌঁছোন তাঁরা। সঙ্গে ছিল ১৫০ জন মহিলা ঢাকি ও নৃত্যশিল্পীরা। মছলন্দপুরের সমস্ত রাস্তাজুড়ে দুই ধারে উপস্থিত সাধারণ মানুষ পুষ্পবৃষ্টির মাধ্যমে তাঁকে বরণ করে নেন। তাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক পদ্মশ্রী পুরস্কার পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত ছাত্র এবং মহিলা ছাত্রীরা। তাঁর বাড়ির সন্তানেরা যে স্কুল থেকে তিনি পড়াশোনা করেছে, সেই স্কুলের সামনে এলে তাঁর সঙ্গে করমর্দন করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় তাঁকে।
গোকুল চন্দ্র দাস বাড়িতে পৌঁছে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান তার ইচ্ছার কথা। সরকারের কাছে তিনি ঢাকি আকাদেমি খোলার জন্য আবেদন করেছেন। যেখানে বিনা পয়সায় ঢাক বাজানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তিনি জানান, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের জন্য রয়েছে বই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ঢাক প্রশিক্ষণের জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত বই পাওয়া যায়নি। এবার সেই অসাধ্য সাধন করতে চলেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই বই লেখার কাজ অর্ধেকের বেশি হয়ে গেছে। তবে আশ্চর্যজনক এটাই যে, ঢাকি সম্রাট যে থানা এলাকার বাসিন্দা, সেই থানা কিংবা মছলন্দপুর তদন্ত কেন্দ্রের কোনও ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের এদিন দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে অবাক হয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা।