ওয়েব ডেস্ক : লোকসভা ভোটের চতুর্থ দফার প্রার্থীদের ২১ শতাংশ ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত। ১৬ শতাংশের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলায় গুরুতর অভিযোগ। এই তথ্য প্রকাশ করেছে
ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর)। শনিবার ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ এবং এডিআর একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে যে, লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে যেসব প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের মধ্যে ২১ শতাংশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ১১৭০ জন প্রার্থীর মধ্যে ফৌজদারি মামলা রয়েছে ৩৬০ জনের বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, আগামী ১৩ মে চতুর্থ দফায় দেশের ১০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৯৬টি আসনে লোকসভা ভোট হবে। এই ভোটে লড়ছেন ১৭১৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ১৭১০ জন প্রার্থীর স্ব-শপথ হলফনামার উপর ভিত্তি করে এই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এডিআর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মোট ৩৬০ জন অর্থাৎ ২১ শতাংশ প্রার্থীর মধ্যে ২৭৪ জন অর্থাৎ ১৬ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে গুরুতর ফৌজদারি মামলা রয়েছে। হত্যা সম্পর্কিত মামলা রয়েছে ১১টি এবং ৫০ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ-সহ নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত মামলা রয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ৪৪ প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মামলা। পাশাপাশি ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ৭০ জনের মধ্যে ৪০ জন (৫৭ শতাংশ) ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী এবং ৬১ জনের মধ্যে ৩৫ জন (৫৭ শতাংশ) কংগ্রেস প্রার্থী। অন্যদিকে, অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমআইএম)-এর ৩ জনের মধ্যে ৩ জনের (১০০ শতাংশ) বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।একইভাবে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর ৪ জনের মধ্যে ২ জন (৫০ শতাংশ) প্রার্থী, শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে)-এর ৪ জনের মধ্যে ২ জন (৫০ শতাংশ) প্রার্থী, সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-এর ১৯ জনের মধ্যে ৭ জন (৩৭ শতাংশ) প্রার্থী, বিজু জনতা দল (বিজেডি)-এর ৪ জনের মধ্যে ২ জন (৫০ শতাংশ) প্রার্থী, শিবসেনার ৩ জনের মধ্যে ২ জন (৬৭ শতাংশ) প্রার্থী, ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)-এর ১৭ জনের মধ্যে ১০ জন (৫৯ শতাংশ) প্রার্থী, তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি)-এর ১৭ জনের মধ্যে ৯ জন (৫৩ শতাংশ) প্রার্থী, যুবজন শ্রমিক রাইথু কংগ্রেস পার্টির (ওয়াইএসআরসিপি)-এর ২৫ জনের মধ্যে ১২ জন (৪৮ শতাংশ) প্রার্থী এবং অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস (এআইটিসি)-এর ৮ জনের মধ্যে ৩ জন (৩৮ শতাংশ) প্রার্থী নিজেদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন।
৯৬টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ৫৮টি (৬০ শতাংশ) নির্বাচনি এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, যদি তিন বা তার বেশি প্রার্থী নিজেদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ঘোষণা করে, তবে একটি নির্বাচনি এলাকায় এই ধরনের সতর্কতা জারি করা হয়। প্রার্থীদের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ১৭১০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪৭৬ জন (২৮ শতাংশ) কোটিপতি অর্থাৎ এক কোটি বা তার বেশি মূল্যের সম্পদ রয়েছে। ৭০ জন প্রার্থীর মধ্যে বিজেপি চতুর্থ দফার ভোটে ৬৫ জন (৯৩ শতাংশ) কোটিপতিকে প্রার্থী করেছে। অন্যদিকে, কংগ্রেসের ৬১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৯২ শতাংশ অর্থাৎ ৫৬ জন কোটিপতি প্রার্থী রয়েছে। এদিকে জেডি(ইউ), শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে), বিজেডি, আরজেডি, শিবসেনা এবং টিডিপি-র মতো প্রধান দলগুলির সব প্রার্থীই কোটিপতি৷
চতুর্থ দফার লোকসভার ভোটের প্রার্থী প্রতি গড় সম্পদ ১১.৭২ কোটি। বিজেপিতে এমন ৭০ জন প্রার্থী রয়েছে যাদের প্রার্থী প্রতি গড় সম্পদ ১০১.৭৭ কোটি, এবং ৬১ জন কংগ্রেস প্রার্থীর গড় সম্পদ২৩.৬৫ কোটি। সর্বোচ্চ সম্পদের নিরিখে শীর্ষ তিন প্রার্থী হলেন অন্ধ্র প্রদেশের টিডিপি-এর ড. চন্দ্রশেখর পেমমাসানি (৫.৭০৫+ কোটি), তেলেঙ্গানার বিজেপির কোন্ডা বিশ্বেশ্বর রেড্ডি (৪,৫৬৮+ কোটি) এবং অন্ধ্রপ্রদেশে টিডিপি-এর প্রভাকর রেড্ডি ভেমিরেডি (৭১৬+ কোটি)। যদিও ২৪ জন প্রার্থী তাদের সম্পদ শুন্য ঘোষণা করেছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে ৯৪৪ জন প্রার্থী (৫৫ শতাংশ) নিজেদের স্নাতক বা তার বেশি বলে ঘোষণা করেছেন। ৬৬ জন প্রার্থী ডিপ্লোমাধারী এবং ৬৪৪ জন প্রার্থী (৩৮ শতাংশ) ষষ্ঠ-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ৩০ জন প্রার্থী শুধুই শিক্ষিত এবং ২৬ জন প্রার্থী নিরক্ষর বলে ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৭০ জন (১০ শতাংশ) মহিলা এবং সর্বাধিক ৬৪২ জন প্রার্থী (৩৮ শতাংশ) তাদের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে, ৮৪২ জন প্রার্থী (৪৯ শতাংশ) ৪১ থেকে ৬০ বয়সের মধ্যে এবং ২২৬ জন (১৩ শতাংশ) প্রার্থীর বয়স ৬১ থেকে ৮০-র মধ্যে।