সৈকত মিস্ত্রী
বড় কঠিন সময়। ‘ভালো করে কথা ভাবা এখন কঠিন! ‘ ২০২৪ এর লোকসভার এই পর্বে এই কথাটাই মনে আসল। চারিদিকে একটা থমথমে পরিস্থিতি। হয়ত ঝড়ের পূর্বভাস। ঠিক জানিনা। এবছরের ভোটের প্রেক্ষিত অন্য বছরগুলোর থেকে আলাদা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের বদলে ধর্মের সুর বড় প্রবল। ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধান মুখ নরেন্দ্র মোদি নিজেকে অবতার বলতেও কুন্ঠিত নন। রামমন্দির প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সুতরাং দুঃখ, দৈন বিদায় নেওয়াটা সময়ের অপেক্ষা। বিজেপির রাজনৈতিক সভায় কান পাতলে একথাগুলো আজকাল শোনা যায়। সত্যি কি সুন্দর সময় আসন্ন? বাস্তবতা কি বলে? ইউনিসেফের তথ্য বলছে, ভারতে ২০১৮ তে পাঁচবছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু হয়েছিল ৮ লক্ষ ৮২ হাজার। ২০০০ সাল থেকে নানা সামাজিক প্রকল্প গ্রহণ করে এদেশে শিশুমৃত্যুতে হ্রাস টানার চেষ্টা হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে তা বাড়তে শুরু করেছে। ২০২৩-এ রাষ্ট্র সংঘ জানাচ্ছে, সদ্যোজাত শিশুমৃত্যুর ৬০ শতাংশই ভারতে। আবার এই সদ্যোজাত শিশুমৃত্যুতেও লিঙ্গ বৈষম্য চোখে পড়ার মতো। শিশুপুত্রের মৃত্যু হার যেখানে ৮ শতাংশ, সেখানে শিশুকন্যার মৃত্যু হার ১২ শতাংশের কাছে।
একালের ধর্মময় ভারতের দিকে তাকালে দেখব বাঁচা বাড়ার যে সূচকগুলো তৈরি হয়েছিল, সেখানেও ভারত পিছনের দিকে। মানোন্নয়ন সূচকে ‘আধুনিক ‘ ভারত ১৯৩ টি দেশের মধ্যে ১৩৪ তম স্থানে।ভসারা বিশ্বে যত মানুষ টিবিতে আক্রান্ত তার ২৭ শতাংশ রোগী বাস করেন ভারতে। আজও প্রতি ঘন্টায় ১ জন কৃষক আত্মহত্যা করেন। অথচ ২০১৯ সাল থেকে বছরে ৪০০ কোটি টাকার বেশি টার্নওভার করা বড় কর্পোরেট কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্স ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ শতাংশে আনা হয়েছে। এর ফলে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে সরকারের রাজস্বে ক্ষতি হয়েছিল ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ এ পরিমাণটা আরও বেড়েছে। এই সময় ক্ষুদ্র ঋণ, কৃষি ঋণের বরাদ্দ ধাপে ধাপে কমেছে। বেকারত্বের সূচকে গত দুদশকে এত বেকার দেশ দেখেনি। আশঙ্কা সংখ্যাগুলো বাড়তে থাকবে।
অথচ আমারা প্রশ্ন করব না? প্রশ্ন করতে ভুলে গেছি।ধর্মের তাড়না আমাদের স্বাভাবিক যৌক্তিক বিচারবোধকে পক্ষাঘাত করে তুলেছে। হিন্দু ভোট ব্যাঙ্ক আজ ভারত শাসকের লক্ষ্য। এর বিপ্রতীপের ছবিও বড় আলোকিত নয়। স্থানীয় দলগুলোও সমানে পাল্লা দিয়ে হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের বিপরীতে লঘু অংশের, প্রান্তিক অংশের মানুষের ভোটকে আজ সংহত করতে মরিয়া। সাথে চুরি দুর্নীতি তাদের মজ্জাগত। ব্যাপ্ত হয়েছে নিচু থেকে উপরতলায়। যার মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। জমিলুঠ, কয়লা, গরুর দেদার পাচার থেকে চাকরি চুরির কুটিল লালসায় আজ আক্রান্ত প্রাদেশিক মানুষজন। বড় অন্ধকার সময়। বড় কঠিন সময়। কোনও অবতার রাম এসে আমার অন্ন বস্ত্রের দায় নেবেন না। বা কল্পতরু সরকারের ভাতাজীবী হয়েও জীবন মান এগোবে না। দরকার কাজ। কাজের সুযোগ। কাজের পরিসর। দরকার প্রাণভরা বাতাস। দরকার জল – জমি – পুকুর – জঙ্গল লুঠেরাদের প্রতিস্পর্ধী স্বর। প্রতিরোধ। প্রশ্নহীন, অন্ধ আনুগত্যের বিপরীতে আসুন, আমরা প্রশ্ন তুলি। এই থমকে যাওয়া সময়ে প্রশ্ন তোলাটা খুব জরুরি