ওয়েব ডেস্ক : ‘মন্দির মসজিদ কো ভাগ লিয়া ভগবানকো / সাগর বাটো জমিন বাটো মৎ বাটো ইনসানকো’। এই আওয়াজ তুলে হজরত সখাতুল্লা ফকিরের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে উরুস উৎসব আয়োজিত হলো মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর থানা এলাকার সুপারিগোলা বলিদামোড়ে বাবা এসলাম ফকিরের খানকা বা আশ্রমে। প্রসঙ্গত, হজরত সখাতুল্লা ফকিরের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত এই উরুস উৎসবের আমন্ত্রণপত্রে বাবা এসলাম ফকির লিখেছেন, ‘জীবের মাঝেই শিবের অবস্থান। এই অমোঘ সত্যকে আজ আমরা ভুলে গিয়েছি। ভুলে গিয়েছি সত্যের সত্যিকারের রূপ। তাইতো আমরা প্রতিনিয়ত ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছি অহেতুক। মানুষকে বাদ দিয়ে ঈশ্বর, ভগবান বা আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তির কথা কোনও মহাপুরুষ কখনও বলেননি। বলেছেন ধর্ম মানে মানুষের অন্তরের দেবত্বভাবকে জাগানো, যা প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সুপ্তাকারে বিদ্যমান। পারিপার্শ্বিকতা সেই ধর্ম অর্থাৎ মানবতা বিকাশে অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থান্ধতা মানুষের চাহিদার সিংহভাগ দখল করে আছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে অমল আলোর সন্ধানে। যে আলো ভালোবাসার পরশে ধন্য অনাবিল জীবনের পথ দেখাবে।’ এই উরুস উৎসবে যোগ দিয়ে সত্যিকারের জীবনবোধে দীক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাবা এসলাম ফকিরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত ৬, ৭ ও ৮ এপ্রিল তিনদিনের উরুস উৎসবে যোগ দেন তাঁর অনুরাগীরা ছাড়াও রাজ্যের নানা প্রান্তের শতাধিক সাধু-ফকির। উল্লেখ্য, উৎসবের অঙ্গ হিসেবে ছিল সাধু সেবা, নরনারায়ণ সেবা, আলোচনা সভা এবং সঙ্গীতানুষ্ঠান। ৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আনারুল শাহ ফকিরের উদ্বোধনী সঙ্গীতের মাধ্যমে সূচনা হয় এই উৎসবের। বাবা এসলাম ফকির, দিলীপ রায় প্রমুখ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখার পর শুরু হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল-ফকিররা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। পরদিন অর্থাৎ ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠানের সূচনায় বাবা এসলাম ফকির, দিলীপ রায় ছাড়াও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ থেকে আগত মাসুম ফকির, খোদাবক্স ফকির-সহ অন্যান্য অতিথিরা। এরপর অনুষ্ঠিত হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। সঙ্গীত পরিবেশন করেন মাসুম ফকির (বাংলাদেশ), আনারুল শাহ ফকির, গোলাম হোসেন, হায়দার ফকির, খোদাবক্স ফকির, ছবি বিবি, সুজাতা বিবি, কোরান শাহ, সাগরা বিবি-সহ ৩৮ জন শিল্পী। শেষদিন অর্থাৎ ৮ এপ্রিল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সঙ্গীতানুষ্ঠানের পর এই উৎসবের সফল সমাপ্তি ঘটে। সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন হাসানুজ্জামান। এই উৎসব সফল করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন সাজ্জাত হোসেন (পিন্টু), শঙ্কর প্রসাদ সরকার, মহসিন ফকির, খায়ের খান, সরিফুল ফকির, ওলি মহম্মদ, আন্টু শেখ-সহ এসলাম ফকিরের অনুগামীরা।