ওয়েব ডেস্ক : একেবারে বলিউডের হিন্দি সিনেমার কায়দায় ফোন। সংলাপও হিন্দি সিনেমার ভঙ্গিতে তো বটেই চোস্ত হিন্দিতে। অনলাইন ফোন কলের ডিপিতে ভেসে উঠেছে পুলিশ অফিসারের ছবি। ফোনে সহৃদয় ব্যস্ত ওই ভুয়ো পুলিশ অফিসার-এর দাবি, ‘হেফাজতে ভাগ্নি, ৫০ হাজার টাকা আমার গুগুল পে-তে এখনই পাঠান ! ‘থানা থেকে বলছি’-ফোনের ভাস্যে ও আতংকে রীতিমত ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছে বারাসাত ছোট জাগুলিয়ার বাসিন্দা সুকুমার মিত্রের। উর্দিধারী ওই ভুয়ো পুলিশ অফিসার সুকুমার মিত্রকে বলেন, আপনার ভাগ্নি অর্পিতা সরকার এক দাগি ক্রিমিনালের সঙ্গে ধরা পড়েছে এবং দুজনকেই থানায় আটক করে রাখা হয়েছে। আদালতে পাঠানোর আগে মামা-কে ফোন ভুয়ো পুলিশ অফিসারের। কারণ, ভাগ্নির ক্যারিয়ার যাতে নষ্ট না হয় তাই তাঁর মামাকে তৎক্ষনাৎ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। এটা ভাগ্নিকে দ্রুত ছাড়াতে হলে মামা সুকুমার মিত্রকে করতে হবে। আর না দিতে পারলে ভাগ্নির হবে ১২ বছরের কারাদণ্ড। এমনটাই জানান ওই জালিয়াত পুলিশ অফিসার। সুকুমারবাবুকে ভাগ্নির বাড়িতে ফোন করে খবর দেওয়ার সুযোগটুকু দিতে নারাজ তিনি। তার একটাই দাবি, ‘এই মুহূর্তেই ৫০ হাজার টাকা আমাকে পাঠিয়ে দিন। তা না হলে ভাগ্নির অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। এমনকী কোন থানা, কোন রাজ্য, কে বলছেন সেসব কোনও কথার উত্তর দিতে নারাজ ওই জালিয়াত অফিসার। ‘যে নাম্বার থেকে ওই জালিয়াত তথাকথিত পুলিশ অফিসারটি ফোন করেছিল সে নাম্বারটি হল ৯২৩২৮৫৯১৯১২১ ফোনটি এসেছে আজ শুক্রবার বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে। এরপর বেশ শংকিত বা বিপদ বুঝে সুকুমার মিত্র ফোনটি কেটে দেন। কিন্তু তারপরও পুলিশ অফিসার ফোন করে একই দাবি করেন। সুকুমারবাবু একই কথা বলেন, ভাগ্নির বাড়িতে তার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে টাকা পাঠাচ্ছেন। পরিশেষে সুকুমারবাবু একজন সাংবাদিক এই পরিচয় জানানোর পর তিনি বলেন, সেই জন্যই তো মামলার ঝামেলার হাত থেকে আপনার ভাগ্নিকে বাঁচাতে চাই।
সুকুমারবাবু এরপর সেই লাইন কেটে দেন। ওই ফোন থেকে এরপর বেশ কয়েকবার ফোন আসতে থাকে। সুকুমারবাবু আর সেই ফোন ধরেননি। কিছুক্ষণ পর ভাগ্নি ও তার বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে তিনি নিশ্চিত হন যে, ভাগ্নি কর্মস্থলেই রয়েছেন। এমনকী কর্মস্থল থেকে ভাগ্নি ফোন করে জানায়- সে নিরাপদেই তার কর্মস্থলে কাজ করছেন। এদিকে জালিয়াতের ফোন টানা বেজে গেলেও সুকুমারবাবু আর সেই ফোন তোলেননি। শেষে বিরক্ত হয়ে ওই ফোন নম্বরটি তিনি ব্লক করে দেন।
সম্প্রতি সরকারি আধিকারিকের বিশেষত পুলিশের ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ফোন করে হুমকি দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে। একের পর এক এমন ঘটনায় সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে অর্থ দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। এদিন এই ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রবীণ সাংবাদিক সুকুমার মিত্র সবাইকে সাবধান থাকার জন্য আবেদন জানান। তাঁর আশা, পুলিশ-প্রশাসন মানুষকে আরও সচেতন করার জন্য সর্বস্তরে সর্তক করবে। নতুবা সাধারণ মানুষ প্রতারিত যেমন হবেন, তেমনি আতংকিত হয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বেন। পাশাপাশি, ডিজিপিকে এদিন এই ঘটনা বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি।