জগদ্ধাত্রী আরাধনায় সেজে উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনার ‘মিনি চন্দন নগর’ কল্যাণগড়

ওয়েব ডেস্ক : রাজ্যে জগদ্ধাত্রী আরাধনায় চন্দন নগরের পরই উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর। এই থানা এলাকায় ৫৬টি জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। এরমধ্যে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার কল্যাণগড়-কয়াডাঙ্গা-কাঁকপুল-দেবীনগর এলাকায় সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো হয় ২৮টি। গত দু’দশক ধরে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ২৮টি সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো দর্শনার্থীদের কাছেও বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। লাখ লাখ দর্শনার্থী পুজো দেখতে আসেন। বৃহত্তর কল্যাণগড় এলাকাকে অনেকেই তাই ‘মিনি চন্দন নগর’ বলেন। অথচ, কয়েক বছর আগেও এই এলাকায় জগদ্ধাত্রী পুজো ঘিরে তেমন উদ্দীপনা ছিল না। সারা বাংলার মতো এই অঞ্চলের মানুষও দুর্গোৎসবকেই তাঁদের প্রিয় উৎসব বলে মনে করতেন। কিন্তু এখন তাঁরা বছরভর জগদ্ধাত্রী পুজো আসার অপেক্ষায় থাকেন। এলাকার যাঁরা কর্মসূত্রে বা অন্য কারণে বাইরে থাকেন, পুজোর আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগ করে নিতে এই সময় তাঁরা বাড়ি ফেরেন। ছুটি উপভোগ করেন।

জানা গেছে, চন্দন নগরের আলোকসজ্জা শিল্পীদের মতো কল্যাণগড় নট্টপাড়ার বাদ্যশিল্পীরা ও তাঁদের পরিবার বাংলার সেরা উৎসব দুর্গোৎসব ও দীপাবলি উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। কারণ, এই দুই উৎসব ছাড়াও বাংলার অন্যান্য পুজোপার্বণে বাজনা বাজিয়ে অন্যদের আনন্দ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন এই বাদ্যশিল্পীরা। বাংলার বাইরেও দেশ বিদেশের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে ঢাক, ঢোল, সানাই-সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে অনুষ্ঠান করতে যান নট্টপাড়ার লোকজন। তাই নিজেদের উৎসব, নিজেদের পুজো হিসেবে প্রায় ৪০ বছর আগে কল্যাণগড়ের নট্টপাড়ায় প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন নট্টরা। পরে একটি দুটি করে কল্যাণগড় অঞ্চলে জগদ্ধাত্রী পুজো বাড়তে থাকে। এখন কল্যাণগড় মোড় থেকে রাধা কেমিক্যাল মোড় ও কল্যাণগড় বাজারকে ঘিরে দেড়-দুই কিলোমিটার বৃত্তের মধ্যে ২৮টি পুজো হয়। থিমের অভিনবত্ব ও অত্যাধুনিক আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে বিভিন্ন মণ্ডপ।
যদিও করোনা পরিস্থিতিতে এবার প্রায় সব পুজো কমিটিরই পুজোর বাজেট অত্যন্ত কম। করোনা সতর্কতা বিধি মেনে যতটা সম্ভব খোলা মণ্ডপ করছেন পুজো উদ্যোক্তারা। এই অঞ্চলে নবমীর দিন থেকে শুরু হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। ৪ দিন ধরে চলে। এবছর শনিবার শুরু হবে পুজো। ৪ দিনের পুজো উৎসবের প্রতিদিন প্রায় প্রতিটি মণ্ডপের বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কল্যাণগড় রামকৃষ্ণ সেবা সমিতি মাঠে বসে বিরাট মেলা। ঘর গৃহস্থালির হরেক রকম জিনিসের বিকিকিনি হয়। যদিও করোনা সতর্কতা বিধির কারণে এবছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। পুজোর কদিন  লাখ লাখ মানুষের সমাগম হলে গত ২০ বছরে এই পুজো উৎসবে অশান্তির ঘটনার তেমন নজির নেই। উল্লেখযোগ্য পুজোগুলির মধ্যে রয়েছে কয়াডাঙ্গা নট্ট কলোনি ক্লাব, রাধা কেমিক্যাল স্কাইলার্ক, কল্যাণগড় অরুণোদয়, রকেট মোড়, রামকৃষ্ণ সেবা সমিতি, কল্যাণগড় নেতাজি বাগ, হরিপুর আমরা সবাই, দেবীনগর নেতাজি সংঘ, কল্যাণগড় ভাই ভাই সংঘ ও বিপুল সাহার পুজো। করোনা পরিস্থিতিতে পুজো নিয়ে সতর্ক প্রশাসন।পুজোর কদিন মণ্ডপে সতর্কতা বিধি কার্যকর করতে চায় পুলিশ। সেই লক্ষে অশোকনগর থানার আহবানে গত সোমবার কচুয়া জয়জয়ন্তী অনুষ্ঠানগৃহে পুজো উদ্যোক্তাদের ও স্থানীয় প্রশাসনিককর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা করেছে পুলিশ। ওই সভায় পুলিশকর্তাদের পাশাপাশি পুজো উদ্যোক্তারা ছাড়াও হাজির ছিলেন অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী, অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার মুখ্য প্রশাসক উৎপল তালুকদার, উপ মুখ্য প্রশাসক অতীশ সরকার প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Next Post

সাতসকালে কাশ্মীরে জোড়া এনকাউন্টার, খতম হিজবুলের শীর্ষ কম্যান্ডার-সহ দুই জঙ্গি

Fri Nov 12 , 2021
ওয়েব ডেস্ক : সাতসকালে কাশ্মীরে একাধিক জায়গায় সেনা-জঙ্গি গুলির লড়াই। খতম প্রভাবশালী জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের এক শীর্ষ কম্যান্ডার। হিজবুলের আরও এক জেহাদি নিকেশ হয়েছে বলে জানিয়েছে কাশ্মীর জোন পুলিশ। কুলগামে এখনও চলছে গুলির লড়াই।

You May Like

Breaking News