ওয়েব ডেস্ক: প্রয়াত হয়েছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। সোমবার রাত ৯টা নাগাদ বাংলাদেশের রাজশাহী শহরে নিজ বাসভবনে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। হাসান আজিজুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি অজস্র গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন হাসান আজিজুল হক। গত ২১ আগস্ট এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চিকিৎসা হয় তাঁর। একটু সুস্থ হওয়ার পর ৯ সেপ্টেম্বর তাঁকে রাজশাহীতে বাড়িতে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও তাঁর হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস ছিল। তাঁর শরীরে লবণের ঘাটতিও ছিল। এরপর করোনা আক্রান্ত হলেও তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শমতো বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তিনি একবার পড়ে গিয়েছিলেন। এরপর নিস্তেজ হয়ে পড়ায় তাঁকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মোহাম্মদ দোয়া বখশ্ ও মা জোহরা খাতুন। পরে তাঁরা পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান। জীবনের অধিকাংশ সময় হাসান আজিজুল হক রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৫৬ সালে খুলনার শহরের অদূরে দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। প্রথম যৌবনেই ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতি করার কারণেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতন ভোগ করতে হয় তাঁকে। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে দর্শন’এ অনার্স-সহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক। কিন্তু বিদেশের পরিবেশ ভালো না লাগায় ডিগ্রি শেষ না করেই দেশে ফিরে আসেন তিনি। রাজশাহী কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ১৯৬০ সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘শকুন’ শিরোনামে তাঁর একটি গল্প প্রকাশ হয়।
১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেছেন। পাশাপাশি, ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার হিসেবে বাংলা সাহিত্যে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন হাসান আজিজুল। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’–এর প্রথম গল্প ‘শকুন’। প্রায় অর্ধশতক ধরে হাসান আজিজুল হক লিখেছেন। তাঁর লেখা ছোটগল্প ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ পাঠক মহলে সমাদৃত। ২০০৬ সালে ‘আগুনপাখি’ নামে হাসান আজিজুল হকের একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসটি প্রথম আলো বর্ষসেরা বইয়ের স্বীকৃতি পায়। আগুনপাখি উপন্যাসের জন্য তিনি ২০০৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালে তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’ প্রকাশিত হয়। হাসান আজিজুল হকের অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘তৃষ্ণা’, ‘উত্তরবসন্তে’, ‘বিমর্ষ রাত্রি, প্রথম প্রহর’, ‘পরবাসী’, ‘আমৃত্যু’, ‘আজীবন’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘খাঁচা’, ‘ভূষণের একদিন’, ‘ফেরা’, ‘মন তার শঙ্খিনী’, ‘মাটির তলার মাটি’, ‘শোণিত সেতু’, ‘ঘরগেরস্থি’, ‘সরল হিংসা’, ‘খনন’, ‘সমুখে শান্তির পারাবার’, ‘অচিন পাখি’, ‘মা-মেয়ের সংসার’, ‘বিধবাদের কথা’, ‘সারা দুপুর’ ও ‘কেউ আসেনি’। তিনি লিখেছেন ‘কথাসাহিত্যের কথকতা’, ‘অতলের পাখি’-র মতো প্রবন্ধ গ্রন্থও। সাহিত্যে অবদানের জন্য হাসান আজিজুল হক ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১৯ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।