ওয়েব ডেস্ক : নাগাল্যান্ডের মন জেলার ওটিঙে গণহত্যার প্রতিবাদে ও সুবিচারের দাবিতে মিছিল করলেন গ্রামবাসীরা। গত ৪ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ডে সেনাবাহিনীর জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নিহত ১৩ জন নাগরিকের মধ্যে ১২ জনই ওটিঙের বাসিন্দা। মঙ্গলবার সুবিচারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ মিছিল করেন ওটিঙ গ্রামের মানুষ। এই মিছিলে গ্রামের মানুষের সঙ্গে পা মেলান নিহত ১২ জনের পরিবার। এছাড়াও, কাছাকাছি গ্রামের বহু মানুষ মিছিলে যোগ দেন। ঘটনার দিন ওটিঙের গ্রামবাসীরা যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সেখানে প্রার্থনা করেন তাঁরা। এদিন সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভিকে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘এত দিন আমরা গভীর বেদনায় আচ্ছন্ন ছিলাম। তাই এখানে আসতে পারিনি। এখানে আসতে ভালোও লাগেনি। কিন্তু এখন এসেছি। চার্চের ফাদাররাও এই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আমরা নিহতদের বিচারের জন্য একসঙ্গে প্রার্থনা করেছি।’
পাশাপাশি, ওটিঙ গ্রাম পরিষদের সদস্য ফিলিপ কোনিয়াক বলেন, সেনা অভিযানে নিহত নাগরিকদের ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে গ্রামবাসীরা।
তিনি আরও বলেন, ‘কোহা থেকে এনবিসিসি গির্জার কর্তাব্যক্তিরাও এসেছিলেন, তাই আমরা এখানে আমাদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। তাঁদের এই এলাকা পরিদর্শন আমাদের শক্তি বাড়িয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ও রাজ্য সরকারের বিশ্বাসঘাতকতা আমরা কখনই ভুলব না। ওটিঙ গ্রামের নাগরিকরা ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।’
এদিন ওটিং গ্রাম পরিষদের ডাকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। নাগাল্যান্ডের মন জেলার কোনিয়াক নাগা উপজাতিদের শীর্ষ সংস্থা কোনিয়াক ইউনিয়ন এই মিছিলকে সমর্থন জানিয়েছে। অন্যদিকে, কোনিয়াক সিভিল সোসাইটি সব নাগা রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে তাদের এলাকার মধ্যে অস্ত্র নিয়ে আন্দোলন এড়াতে আবেদন করেছে। ওই আবেদনে বলা হয়েছে, কোনও গোষ্ঠী শান্তি ব্যাহত করলে তাকে কনিয়াকদের শত্রু হিসাবে বিবেচনা করা হবে। এছাড়াও, কনিয়াকরা এর দায় নেবে না। আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সব কনিয়াক সংগঠনের মতামত চেয়েছে কনিয়াক ইউনিয়ন। ওটিঙ হত্যাকাণ্ডে নিহতদের পরিবারগুলোর সুবিচারের দাবি আদায় না হলে পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে কনিয়াক ইউনিয়ন। সেনা অভিযানে নিরীহ গ্রামবাসীদের মৃত্যুর পর বিতর্কিত সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফস্পা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই আইন অশান্ত অঞ্চলে সেনাবাহিনীকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে। উত্তর-পূর্বে সশস্ত্র বাহিনীকে দেওয়া এই বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যাহার করার দাবিও উঠেছে। নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীরা প্রকাশ্যে একই দাবি করেছেন। নাগাল্যান্ড সরকার আফস্পা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ওটিঙের ওই গণহত্যার পর নাগাল্যান্ড সরকার হর্নবিল উৎসবও বাতিল করেছে। উল্লেখ্য,এই বার্ষিক উৎসব পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ। এর টানে হাজার হাজার দেশি ও বিদেশী পর্যটক এই সময়ে নাগাল্যান্ডে আসেন। নাগাল্যান্ড বিধানসভা সর্বসম্মতভাবে উত্তর-পূর্ব থেকে, বিশেষ করে নাগাল্যান্ড থেকে বিতর্কিত সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইন, ১৯৫৮ বাতিল করার দাবিতে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে৷ রাজ্য বিধানসভা ‘নাগা রাজনৈতিক ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য চলমান প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করার জন্য’ একটি ৫ দফা প্রস্তাব পাস করেছে। রাজ্যের মন জেলায় সেনা অভিযান ও তার পরের সহিংসতায় ১৪ জন নিহত হওয়ার পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাগাল্যান্ড বিধানসভা। মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিওর নেতৃত্বে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে এই রেজল্যুশন পাস হয়েছে ও নাগা শান্তি আলোচনার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওটিঙ কাণ্ডের পর এই কঠোর আইনকে তীব্র আক্রমণ করে রিও বলেছিলেন, ‘নাগাল্যান্ড ও নাগা জনগণ সবসময় আফস্পা’র বিরোধিতা করেছে। এটি বাতিল করা উচিত।’ যদিও, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা রাজ্যে বিতর্কিত আইনের ব্যবহারকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আফস্পা প্রত্যাহার করা রাজ্য সরকারের আহ্বান হতে পারে না। এটি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।’