ওয়েব ডেস্ক : ইংরেজি মাধ্যম স্কুলকে চ্যালেঞ্জ নিতে পারে বাংলা মাধ্যম স্কুল। দাবি করলেন সরকারি স্কুল কল্যাণগড় বিধান চন্দ্র বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক বানীব্রত রায়। মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বানীব্রত রায় বলেন, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক আর পরিকাঠামো থাকার পরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বাংলা মাধ্যম স্কুল। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে বাংলা মাধ্যম স্কুলে কমছে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলা মাধ্যম স্কুল। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে এদিন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের যে উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে, এখানে আমি মনে করি অভিভাবক-অভিভাবিকাদের কাছে আমরা সঠিক ভাবে পৌঁছোতে পারছি না। এই চ্যালেঞ্জটাকে অ্যাকসেপ্ট করছি অবশ্যই, কারণ পিছিয়ে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। বেঙ্গলি মিডিয়াম স্কুলে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব ইনিসিয়েটিভ নেওয়া হচ্ছে, যেসব প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, আপনাদের মাধ্যমে সেগুলি অভিভাবকদের কাছে পৌঁছোতে হবে। সেজন্য আপনাদের বলব, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। বেঙ্গলি মিডিয়াম স্কুলগুলিতে যাতে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের ভরতি করেন, সে বিষয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ান।’ এখন বিভিন্ন অঞ্চলে পড়ুয়া ও অভিভাবকরা দাবি তুলছেন, ‘চাই না আর গুগল জুম, ফিরিয়ে দাও ক্লাসরুম’। এই দাবি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বানীব্রত রায় বলেন, ‘সেটা তো সঙ্গত দাবি। প্যান্ডেমিক সিচুয়েশনে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা দেশে স্কুল খোলা বা বন্ধ রাখা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। প্যান্ডেমিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্কুল খোলা তো অবশ্যই প্রয়োজন। একটা ছাত্র যদি স্কুলে না আসতে পারে, স্কুলে এলে যা হয়, জুম বা অনলাইন প্লাটফর্মে কি সেটা হয়, কখনোই হান্ড্রেড পার্সেন্ট সম্ভব না। তবে আশা রাখি, খুব শীঘ্রই স্কুল খুলে যাবে। ভ্যাকসিনেশন হচ্ছে। নাইন, টেন, ইলেভেন, টুয়েলভ ভ্যাকসিনেশন হয়ে গেছে। অন্যান্য ক্লাসের ভ্যাকসিনেশনও খুব তাড়াতাড়ি হবে এবং আশা রাখি, খুব তাড়াতাড়ি আমরা বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের দেখতে পাব।’
করোনা অতিমারি পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁরা কিভাবে পঠন পাঠন চালিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন এদিন তা উল্লেখ করেন বানীব্রত রায়। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে এক অডিও ভিশুয়াল উপস্থাপনায় সাংবাদিকদের কাছে এই স্কুলের সামগ্রিক পরিকাঠামো ও সাফল্যকে তুলে ধরা হয়। পঠন পাঠনের পাশাপাশি পড়ুয়াদের সামাজিক কাজে যুক্ত করা, এনসিসি, খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক কর্মসূচি, লাইব্রেরি, ম্যাগাজিন, শিক্ষামূলক ভ্রমণ, কারিগরি শিক্ষা-সহ কন্যাশ্রী, সবুজশ্রী ও অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের সুবিধার কথা তুলে ধরা হয় এই উপস্থাপনায়। দাবি করা হয় যে, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদেরও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ এই স্কুলে রয়েছে। তাদের উপযোগী শিক্ষা ও আলাদা শৌচাগারও রয়েছে এই স্কুলে। সব মিলিয়ে বলা যায়, বেসরকারি উদ্যোগের বড় বড় স্কুলের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার মতো পরিকাঠামো ও অভিজ্ঞ শিক্ষক শিক্ষিকা এই স্কুলে রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক জানান, করোনা অতিমারি পরিস্থিতিতে অনলাইনে শিক্ষা সুযোগ দেওয়ার জন্য দু’একজন পড়ুয়ার হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দেওয়া হয়। শিক্ষক শিক্ষিকারা নিজেদের উদ্যোগে তাদের হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দেন বলেও জানান তিনি। এদিন এই সাংবাদিক সম্মেলনে স্কুল কমিটির সভাপতি উৎপল সাহা, প্রবীণ শিক্ষক বিভাষ সরকার, স্টাফ কাউন্সিলের সম্পাদক সমীর চন্দ্র ব্যাপারী ছাড়াও অল্প কয়েকজন শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্র হাজির ছিলেন। করোনা বিধি মেনে আয়োজিত এই সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করে বিদ্যালয়ের ছাত্র অরিজিৎ রায়। স্কুল সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এক অভিভাবক সোনালী চক্রবর্তী আর দুই পড়ুয়া অন্তু দাস ও রাহুল মিস্ত্রী।