ওয়েব ডেস্ক : মোদি সরকারকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে আক্রমণ করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিঁধে তিনি বলেন, দেশের নাগরিকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে মোদি সরকার। গতবছর ১৮ জুন দ্য ওয়ার সংবাদ মাধ্যমের একটি রিপোর্ট থেকে ইজিরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস প্রযুক্তি ব্যবহার করে এদেশের সাংবাদিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, মন্ত্রী বিচারপতি-সহ কয়েক’শ ব্যক্তির ফোনে নজরদারির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিকদের ব্যক্তিগত পরিসরে নজরদারির এই অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয় দেশ। কিন্তু বিরোধীদের এই অভিযোগ খারিজ করে সংসদে সরকার জানায়, ইজরায়েলের এনএসও সংস্থার সঙ্গে কোনও লেনদেন করেনি। এনিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও হলফনামা দেয় সরকার। যদিও তাতে পেগাসাস কেনা হয়নি বলে উল্লেখ করেনি কেন্দ্র। এখন দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত রিপোর্টে যখন দাবি করা হয়েছে যে, এক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে পেগাসাস কিনেছিল ভারত, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। কংগ্রেস, তৃণমূলের পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মমনিয়ম স্বামীও। স্বামী নিউইয়র্ক টাইমসের খবর নিয়ে সরকারের বক্তব্য দাবি করেছেন।
এদিন একদিকে ভারত ও ইজরায়েলের সম্পর্কের ৩০ বছর উদযাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর অন্যদিকে, ইজরায়েলের স্পাইওয়্যার পেগাসাস নিয়ে নয়া বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই ইস্যুতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তুলোধনা করছে বিরোধীরা। এদিন ভারত ও ইজরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৩০তম বার্ষিকীতে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, পারস্পরিক এই সহযোগিতা উভয় দেশের সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে তাঁর ইজরায়েল সফরের সময়ে পেগাসাস ও একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি নিয়ে ইজরায়েলের সঙ্গে ২ মার্কিন বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিলেন মোদি। তিনিই প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইজরায়েল সফর করেন। আর তাঁকে নিশানায় রেখে এদিন ট্যুইটারে রাহুল গান্ধি লিখেছেন, ‘আমাদের প্রাথমিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, রাজনীতিবিদ ও জনসাধারণের ওপর নজরদারির জন্য পেগাসাস কিনেছিল মোদি সরকার। সরকারি কর্মকর্তা, বিরোধী নেতা, সশস্ত্র বাহিনীর কর্তা, বিচার বিভাগের কর্তার ওপর নজরদারির লক্ষ্য ছিল। এটা দেশদ্রোহিতা। মোদি সরকার দেশদ্রোহিতা করেছে।’ যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভিকে সিং নিউ ইয়র্ক টাইমসকেই নস্যাৎ করে দিয়েছেন। ট্যুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আপনি কি নিউইয়র্ক টাইমসকে বিশ্বাস করতে পারেন? তারা ‘সুপারি মিডিয়া’ নামে পরিচিত।
পেগাসাস নিয়ে সংসদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিবৃতিকেও এদিন আক্রমণ করেছে কংগ্রেস। সংসদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বলেছিল, ইজরায়েলের সংস্থা এনএসওর সঙ্গে কোনও লেনদেন করেনি। অন্যদিকে, চাপের মুখে এনএসও বলেছিল যে, তারা কেবল সরকার এবং সরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে ব্যবসা করে। যদিও সরকার হলফনামা বা সংসদে কখনও বলেনি যে, তারা পেগাসাস কিনেনি। তাই সরকার সংসদকে ও সুপ্রিম কোর্টকে বিভ্রান্ত করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। এদিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, পেগাসাস নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করা হলে মোদি সরকার সুপ্রিম কোর্টে মিথ্যা কথা বলেছে। একটি হলফনামায় সরকার বলেছে ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে আমরা সরকারের বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ অস্বীকার করি।’ কংগ্রেসের অভিযোগ, পেগাসাস স্পাইওয়্যার মোবাইল ফোন হ্যাক করতে পারে, মাইক্রোফোন ও ক্যামেরা সক্রিয় করতে পারে আর ছবি তুলতে পারে। সুরজেওয়ালা বলেন, ‘পেগাসাসের মাধ্যমে মোবাইল ফোন থেকে যাবতীয় তথ্য, হোয়াটসঅ্যাপের তথ্য অবৈধ উপায়ে চুরি করে মোদির এজেন্সিগুলিতে পাঠানো হয়। এগুলি আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে।’ তাঁর অভিযোগ, রাহুল গান্ধি ও তাঁর ৫ জন কর্মী, এইচডি দেবগৌড়া, সিদ্দারামাইয়া, এইচডি কুমারস্বামী, বসুন্ধরা রাজে, প্রবীণ তোগাড়িয়া, স্মৃতি ইরানির বিশেষ অফিসার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, অলোক ভার্মা, কেকে শর্মা, জিতেন্দ্র কুমার ওঝার বিরুদ্ধে স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছিল। এছাড়াও আইনজীবী, সমাজকর্মী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়।