জয়ন্ত কর্মকার, হাবরা, উত্তর ২৪ পরগনা
৪০টিরও বেশি কৃষক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে সোমবার দেশজুড়ে বিশ্বাসঘাতকতা দিবস পালন করলেন কৃষকরা। কারণ, কথা রাখেনি কেন্দ্রের মোদি সরকার। প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। তাই এদিন সারা দেশের পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় সংযুক্ত কিষান মোর্চার শরিক সংগঠন অল ইন্ডিয়া কিষান ও ক্ষেতমজদুর সংগঠন (এআইকেকেএস)-এর কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিশ্বাসঘাতকতা দিবস পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল পোড়ান। প্রসঙ্গত, সরকারের সঙ্গে কৃষকদের বিরোধ শুরু কৃষি আইন নিয়ে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ৩টি কৃষি আইন সংসদে পাশ করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। সরকার দাবি করে, এই আইন কৃষকদের সামনে বিরাট বাজারের সুযোগ তৈরি করবে। কৃষক তার উৎপাদিত ফসল দেশের যেকোনও জায়গায় বিক্রি করতে পারবে। কৃষকদের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। অন্যদিকে কৃষকদের দাবি, এই আইন কৃষকবিরোধী। এই আইনের ফলে কর্পোরেট সংস্থার ওপর বাধ্য হতে হবে কৃষকদের। ফলে বিতর্কিত নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের কৃষক সংগঠনগুলি এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করে।
বিতর্কিত ৩টি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ২৫ নভেম্বর দিল্লি চলো অভিযানের ডাক দেয় কৃষকরা। প্রতিবাদী কৃষকদের ঠেকাতে দিল্লির সীমানায় ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ। কৃষকদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, জলকামান প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু এরপরেও শান্তিপূর্ণ কৃষক বিক্ষোভ ঠেকাতে পারেনি সরকার। বিতর্কিত ৩টি কৃষি আইন প্রত্যাহার ও ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তার দাবিতে রাজধানীর সীমানায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন দেশের অন্নদাতারা। কনকনে ঠাণ্ডা, তীব্র দাবদাহ ও প্রবল বর্ষাকে উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে বিক্ষোভ অবস্থান চালিয়ে যান তাঁরা। নানা ভাবে আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা করে বিজেপি সরকার। কিন্তু খলিস্তানি যোগ, সন্ত্রাসবাদী যোগ, দেশদ্রোহী তকমা দিয়েও সরকার কৃষকদের অহিংস বিক্ষোভ দমাতে পারেনি। কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে ১১ বার বৈঠক করেও এই বিরোধের মীমাংসা করতে পারেনি। একবছরেরও বেশি সময় ধরে দিল্লির সীমানায় সিঙ্ঘু, টিকরি ও গাজিপুরে বিক্ষোভ অবস্থান করেন কৃষকরা। পাশাপাশি দেশজুড়ে বিভিন্ন সময়ে সমাবেশ, বিক্ষোভ অবস্থান, রেল রোকো, বনধ-সহ নানা কর্মসূচি সংগঠিত করেন।
শেষমেষ ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর সরকার ঘোষণা করে কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষকদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য আবেদন করেন। সংসদে কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পাশ হয় ২৯ নভেম্বর। কিন্তু সরকার কৃষকদের বকেয়া দাবি মেনে নেয়নি। প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও মেনে নেয়নি ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তার দাবি, আন্দোলনের সময়ে প্রয়াত প্রতিবাদী কৃষকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি, প্রতিবাদী কৃষকদের ওপর থেকে মামলা তুলে নেওয়ার দাবি ও লখিমপুর খেরিতে প্রতিবাদী কৃষকদের গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রের অপসারণের দাবি। তাই কৃষকদের অভিযোগ, সরকার তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাই সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা এদিন দেশজুড়ে বিশ্বাসঘাতকতা দিবস পালন করেছে। সরকারের সঙ্গে বিরোধ জারি রেখেছে। হাবরাতেও এদিন বিশ্বাসঘাতকতা দিবস পালন করেছেন কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।