সৈকত মিস্ত্রী
ঐতিহ্য মেনে মাঘী পূর্ণিমায় চন্দনপুরের চাঁড়ালখালিতে শুরু হল হরিমেলা। প্রতিবছর এই দিন সুন্দরবনের দ্বীপ অঞ্চলে অনুষ্ঠিত এই মেলায় ভিড় জমান লক্ষাধিক মানুষ। কালিন্দী নদীর পাড়ে অবস্থিত চাঁড়ালখালি মাঠকে কেন্দ্র করে এলাকায় সাজ সাজ রব শুরু হয় মাঘ মাসের গোড়া থেকে। শুধু দ্বীপ অঞ্চল নয়, বাইরে থেকেও পসরা সাজিয়ে মেলায় পাড়ি দেন বিক্রেতারা। মেলার প্রান্তে হরিমন্দিরে চলে পুজোপাঠ আর ভক্তবৃন্দের বাতাসা লুঠ থেকে দণ্ডিকাটার মতো ক্রিয়াকর্ম। আনাজপাতি থেকে বাসনপত্র, বেতের ধামাকুলো-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের খুঁটিনাটি নিয়ে মেলায় ভিড় করেন দূরদূরান্তের বিক্রেতারা। মেলাকে কেন্দ্র করে দ্বীপ অঞ্চলে যেন প্রাণের সাড়া জেগে ওঠে কয়েকদিন। মাঘী পূর্ণিমায় শুরু হয়ে মেলা চলবে ৪ থেকে ৫ দিন। থাকবে রাতভোর বিচিত্রানুষ্ঠান।
কালিনী নদীর এপারে চন্দনপুর আর নদী পার হলেই বাংলাদেশের খুলনা জেলা। ফলে মেলার কয়েকদিন চলবে বিসিএফের বাড়তি নজরদারি। অতীতে নদীর ওপাড়ে বাংলাদেশেই প্রথম হরিমেলা শুরু হয়। তারপর কালিন্দীর এই তীরে মেলা শুরু হয়। তাও শতবছর আগের কথা। এখনও হরিপুজোকে কেন্দ্র করে ওপাড়ে মেলা বসে। তবে সেই জৌলুশ আর নেই। কালের নিয়মে নদীগর্ভে ওপাড়ের মন্দিরও তলিয়ে গেছে। পরে অবশ্য নতুন মন্দির তৈরি করা হলেও পূর্বের গৌরব আর ফেরেনি। এখন হরি মেলা বললে চাঁড়ালখালির মেলার কথা একবাক্যে লোকের মুখে উচ্চারিত হয়। মেলাকে ঘিরে আজও নানা অলৌকিক বিশ্বাস আর কিংবদন্তি দ্বীপবাসী মানুষের আলাপচারিতায় শোনা যায়। নিস্তরঙ্গ দ্বীপজীবন এই মেলাকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন প্রাণবন্ত হয়ে থাকবে।