ওয়েব ডেস্ক : উত্তর প্রদেশের সীতাপুর জেলায় একটি মসজিদের বাইরে এক গেরুয়াধারী বিদ্বেষ বক্তৃতা করেছিলেন। মুসলিম মহিলাদের অপহরণ করে ধর্ষণের হুমকি দেন তিনি। এ ঘটনার ৬ দিন পর অভিযুক্ত গেরুয়াধারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। জাতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ওই গেরুয়াধারীর বিদ্বেষ বক্তৃতার ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর সীতাপুর পুলিশ ট্যুইটারে এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, এক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের ভিত্তিতে এই বিদ্বেষ বক্তৃতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গেরুয়া পরা একজন জিপে বসে একটি জমায়েতে ভাষণ দিচ্ছেন। তাঁর পিছনে বসে রয়েছেন পুলিশের উর্দি পরা এক ব্যক্তি। জানা গেছে, লখনউ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট শহর খরিদাবাদের একটি মসজিদের সামনে বিদ্বেষ বক্তৃতা দিয়েছেন ওই গেরুয়াধারী। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে মাইক্রোফোন হাতে গেরুয়া পরা ওই মহন্ত তাঁর জিপের কাছে জমায়েত হওয়া মানুষের সামনে হিংসাত্মক ও প্ররোচনামূলক ভাষণ দিচ্ছেন। আর উল্লসিত জনতা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁর ভাষণে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে খুন করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এরজন্য সংগ্রহ করা হয়েছে ২৮ লাখ টাকা। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই অঞ্চলে একটি মেয়েকেও যদি কোনও মুসলিম হয়রানি করে তবে মুসলিম মহিলাদের অপহরণ করবেন তিনি ও প্রকাশ্যে ধর্ষণ করবেন। এই হুমকি ভাষণে জনতাকে উল্লাসে ফেটে পড়তেও দেখা যায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অপর এক ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ৪ জন পুলিশকর্মী রয়েছে একটি জিপে। ৩ জন হুডখোলা জিপে দাঁড়িয়ে ও এক গেরুয়াধারী জিপে বসে বিদ্বেষ ভাষণ দিচ্ছেন। প্রশ্ন তোলা হয়, ৬ দিন পর কেন এফআইআর হলো? এখনও কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? এই ভিডিওটি ট্যুইটারে শেয়ার করে লেখা হয়েছে, পুলিশকর্মীদের উপস্থিতিতেই এক মহন্ত মুসলিম মহিলাদের অপহরণ করে খোলা জায়গায় ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল দুপুর দুটো নাগাদ সীতাপুরের খরিদাবাদের শেশেওয়ালি মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। ট্যুইটারে শেয়ার করা এই ভিডিও সম্পর্কে ফ্যাক্ট চেক ওয়েবসাইট অল্ট নিউজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবেইর বলেন, গত ২ এপ্রিল এই ভিডিও করা হয়েছে। কিন্তু ৫ দিন পরও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই ট্যুইটের জবাবে সীতাপুর পুলিশ জানিয়েছে, একজন শীর্ষ আধিকারিক এই মামলার তদন্ত করছেন। প্রকৃত ঘটনার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে, জুবেইরের ট্যুইটের প্রতিক্রিয়ায় একাধিক ব্যক্তি এই ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিদ্বেষকারী ওই ধর্মীয় নেতাকে কেউ কেউ ‘বজরঙ্গ মুনি’ বলে শণাক্ত করেছেন। এই ঘটনায় রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ও জাতীয় নারী কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে একাধিক মানুষ।