সৈকত মিস্ত্রী
গরম বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জল সঙ্কট। আর এই জলসঙ্কটে জেরবার জল- জঙ্গল পরিবেষ্টিত সুন্দরবন। দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা তাপপ্রবাহে এরমধ্যেই জলস্তর নেমে গেছে। এই তলানিতে পৌঁছে যাওয়া জলস্তরের কারণে পানীয় জলের আকাল দেখা দিয়েছে গোটা দ্বীপ জুড়ে। হিঙ্গলগঞ্জ দক্ষিণ ব্লকের অন্তর্গত হেমনগর সংলগ্ন শিবনগর পাড়গুমটি স্কুলের সামনে কাঠফাটা রোদে সামান্য একবালতি জলের জন্য যে হুড়োহুড়ির ছবি দেখা গেল তাতে বোঝা যায় সঙ্কট কত গভীর। একই জল সমস্যা কালিতলা গ্রাম পঞ্চায়েত ও সামসেরনগরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। রোদের তাপের সঙ্গে বাড়ছে জলসঙ্কট, অথচ পানীয় জল নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
শুধু সুন্দরবন নয়, এই রাজ্যের ৪২টি ব্লকের জলস্তর বিপদজনক ভাবে নীচে নেমে গেছে। আশঙ্কা আগামী দিনে সঙ্কট আরও বাড়বে। ২০১৮ সালে নাসার উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছিল বিশ্বের ৫ লাখ জলাধারের জল হু হু করে নামছে। বোরিং করে মাটির নীচ থেকে যত অনিয়ন্ত্রিত জল তোলা হবে এই সঙ্কট আরও বাড়বে। ২০১৩-২০১৪ থেকে ২০২০-২১ এই ৭ বছরে ভূপৃষ্ঠের জলপ্রবাহের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের সংখ্যা ৫, ৯২০০ থেকে কমে ৪,২০০৫ তে থেমেছে। অর্থাৎ ভূগর্ভের জলের ব্যবহার বেড়েছে। যার দাম চোকাতে হবে আগামী দিনের পৃথিবীকে। সারাদেশে ৩১১৯টির বেশি শহর ও মফস্বলে বোরিং, সাবমারসিবলের সাহায্যে অনিয়ন্ত্রিত জল তোলা হয়। ধনতান্ত্রিক পৃথিবীর অতি, অরণ্য বিধ্বংসী উন্নয়নের নামে যেভাবে প্রকৃতিকে লুন্ঠন ও দূষণ করা চলছে, তার অনিবার্য পরিণতি এই জলসঙ্কট। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব স্বয়ং জলবেষ্টিত দ্বীপভূমে। অনিয়ন্ত্রিত জল ব্যবহার, বিশ্ব-উষ্ণায়ন না ঠেকাতে পারলে আগামী দিন এই জল সঙ্কট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।