ওয়েব ডেস্ক : সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক সূচকে ৮ ধাম নেমে গেল ভারত। অবনতি হল আরও। ১৮০টি দেশের মধ্যে তালিকায় ভারতের অবস্থান ১৫০। ভারতের আগে রয়েছে প্রতিবেশী নেপাল, ভূটান ও শ্রীলঙ্কা। রিপোর্ট বলছে, মোদি জমানায় ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা। ৩ মে মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে বা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম স্বাধীনতা দিবসে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারস। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে কোন দেশ কোন অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে তা নিয়েই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এই সংগঠন। এই রিপোর্ট অনুযায়ী সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতার সূচকের নিরিখে ভারত রয়েছে ১৫০তম স্থানে। গত বছর ভারত ছিল ১৪২তম স্থানে। এবার আরও ৮ ধাপ নামল এই দেশ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সংকটে। কেবলমাত্র ভারত নয়, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে অবনমন হয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ (১৬২), পাকিস্তান (১৫৭), আফগানিস্তান (১৫৬) ও শ্রীলঙ্কারও (১৪৬)। তবে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে উত্থান হয়েছে চিন, নেপাল ও ভূটানের।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, দেশে সাংবাদিকদের উপর লাগাতার হামলা চলছে। পাশাপাশি, সংবাদ মাধ্যমের ওপর রাজনৈতিক চাপ তৈরি করা হচ্ছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক দেশের জাতীয়তাবাদী বা একনায়কতান্ত্রিক সরকার সংবাদ মাধ্যমের ওপর চাপ তৈরি করছে। তাদের কণ্ঠরোধ করছে। রিপোর্টে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর অনুগামী ‘ভক্তদের’ কথাও উঠে এসেছে। লেখা হয়েছে, প্রথম থেকে মোদি মনে করেন কিছু সাংবাদিক মোদি ও তাঁর অনুগামীদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে। যেসব সাংবাদিক কেন্দ্রীয় সরকার ও মোদির সমালোচনা করেছে, তাঁদের নানারকমভাবে হেনস্থা, এমনকী মারধরও করেছে মোদির অনুগামীরা।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস-এর মতে, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল। এক সময়ে এই সংবাদ মাধ্যমকে প্রগতিশীল বলেই মনে করা হত। কিন্তু মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই বদল ঘটতে শুরু করে। কারণ, মোদি মনে করেন সাংবাদিকেরা মাধ্যম হিসেবে তাঁর ও সমর্থকদের মধ্যে সম্পর্ককে ‘কলুষিত’ করেন। এই সংগঠনের রিপোর্ট অনুযায়ী, তত্ত্বগত ভাবে সাংবাদিকদের রক্ষা করার পক্ষে রয়েছে ভারতের আইন। কিন্তু রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, আদালত অবমাননা ও জাতীয় সুরক্ষার ক্ষতি করার মতো অভিযোগ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনা হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করলে সাংবাদিকদের দেওয়া হচ্ছে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা। বর্তমানে ১৩ জন সাংবাদিক জেলে রয়েছেন। উত্তর প্রদেশের হাথরসে ধর্ষণ-খুনের খবর করতে গিয়ে জেলবন্দি রয়েছেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। এবছরে একজন সাংবাদিক খুন করা হয়েছে।
মধ্য প্রদেশে সম্প্রতি থানায় সাংবাদিককে বিবস্ত্র করার ঘটনা সামনে এসেছে। উত্তর প্রদেশে প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন ৩জন সাংবাদিক। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি পুলিশ। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর রিপোর্টে জানানো হয়েছে, চলতি বছরে কাজ করতে গিয়ে বিস্ফোরণে ওড়িশায় এক সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর মতে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভয়াবহ প্রচার চলছে। খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মহিলা সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেওয়া হচ্ছে। কাশ্মীরে সাংবাদিকদের ক্রমাগত হেনস্থা করছে পুলিশ ও আধাসেনা। অনেকে বছরের পর বছর বন্দি রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক এই রিপোর্ট নিয়ে একটি যুগ্ম বিবৃতি দিয়েছে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান উইমেন প্রেস কোর ও প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। তাদের দাবি, ভারতে যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিপন্ন হচ্ছে সে কথা ওই রিপোর্টে ফুটে উঠেছে।