আবু আলী, ঢাকা
বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি এলাকার কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ও ৩ শতাধিক দগ্ধ ও জখম হয়েছে। শনিবার রাত ১১টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এতে রাসায়নিকের অনেকগুলো কনটেইনার একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে আশেপাশের বেশ কয়েকটি ভবনের জানালা ভেঙে যায়। ৪ কিলোমিটার দূরের এলাকা থেকেও বিস্ফোরণের ধাক্কা টের পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। রবিবার সকাল হতেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একের পর এক মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স আসছে। চারপাশে তৈরি হয়েছে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘৪৯ জনের মৃত্যুর নিশ্চিত খবর জেনেছি। আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে মরদেহ ইমারজেন্সিতে আসছে বলে খবর পেয়েছি। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৯০ জনের বেশি ভর্তি আছেন। গুরুতর দগ্ধ ৩ জনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে ১৫ জন, জেনারেল হাসপাতালে ৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। ৩ জনকে এদিন সকালে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীনরা হলেন শিল্প পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান (৩৭), ডিপোর সিকিউরিটি অ্যাডমিন খালেদুল রহমান (৫৮) ও সিকিউরিটি ম্যানেজার একেএস মকফারুল (৬৫)।
ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। জখম হয়েছেন ১৪ জন। তাঁদের চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা করা হচ্ছে।
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, ‘একটি হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভর্তি রফতানি কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত।’
বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তৈরি পোশাক মালিকদের প্রায় ১ হাজার টিইইউ’স (২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার) কনটেইনার পণ্য পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএর সহসভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী। এর মধ্যে প্রায় ৯০০ টিইইউ’স যুক্তরাষ্ট্রগামী ও ১০০ টিইইউ’স ইউরোপগামী। এসব পণ্য রফতানির জন্য এই ডিপোতে আনা হয়েছিল। এছাড়া পুড়ে যাওয়া কনটেইনারে মার্কিন কোম্পানি এইচঅ্যান্ডএম-এর পণ্যও ছিল বলে জানান তিনি।
বিএম কনটেইনার ডিপোতে প্রায় ৬০০ শ্রমিক কাজ করেন। ৩০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত ডিপোটির কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৬ হাজার ৫০০ টিইইউ’স।
প্রসঙ্গত, কনটেইনার ডিপোতে বিষ্ফোরণের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে ২০২০ সালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার একটি ডিপোতে তেলের ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও তিনজন। বাংলাদেশে ১৯টি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) রয়েছে। এগুলো প্রায় শতভাগ রফতানি পণ্য হ্যান্ডেল করে। এছাড়া ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যও ডেলিভারির জন্য নিয়ে আসা হয় এসব ডিপোতে। এসব ডিপোর কনটেইনার ধারণ সক্ষমতা প্রায় ৭৭ হাজার টিইইউ’স কনটেইনার।