পার্থ মিত্র
আমার নাম নিমু। আমার বাড়ি ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটা ছোট্ট গ্রামে। ওই গ্রামের আজ আর অস্তিত্ব নাই। নদীর স্রোতে বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে। আর চলে গেছে অনেক স্মৃতি। সেটা কেবলই বেদনা দেয়। আমাদের হাতপাখা তৈরির পারিবারিক ব্যবসা ছিল। আমাদের পূর্বপুরুষের থেকে পাওয়া এই হাতপাখা তৈরির কাজে আমি ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে সহযোগিতা করতাম। এভাবেই আস্তে আস্তে আমার সাথে পাখার এক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। এখনও মনে পড়ে যে, রং বেরঙের তুলিতে পাখাগুলোকে সাজিয়ে তুলতাম। আমার বিয়েও হয় হাতপাখা তৈরি করে এমন পরিবারের সাথে। কিন্তু আস্তে আস্তে প্লাস্টিক এসে বাজার দখল করল। প্লাস্টিকের পাখাতে বাজার ছেয়ে গেল। আমি ভাবলাম অন্য কিছু করব, যাতে আরও বেশি অর্থ উপার্জন হবে। এই ভাবেই এক রোদপোড়া দুপুরে যখন আমি গাছের তলায় বসে কাজ করছি তখন হঠাৎ এক চোখধাঁধানো আলোয় আমি অন্ধকার দেখতে লাগলাম।
এই অন্ধকারের মাঝে দেখলাম এক দিব্যজ্যোতি পুরুষ আমার ডেকে হাত বাড়িয়ে কাপড়ে মুড়ে কি যেন একটা দিল। সেটা আমি হাত পেতে নেওয়ার পর কয়েক ফোটা জল চোখে পড়তেই আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমি ধড়ফড় করে উঠে দেখি বাইরে আধকালো করা মেঘ, বৃষ্টি আস্তে আস্তে শুরু হচ্ছে। আমি ঘরে গেলাম। আমার হাতপাখার কাজগুলো সেরে ফেলব। এই সময় কাপড়ে মোড়া জিনিসটা খুলতেই আমি অবাক, দেখি, এক অদ্ভুত দেখতে হাতপাখা। অনেকদিন আগে আমি এই পাখাটাকেই আমার মাকে তৈরি করতে দেখেছিলাম। আমার বাবা সেটা দিয়েছিলেন জমিদারকে। আজ সেই পাখাটা আমার হাতে। এটা যেন আমার কাছে আশীর্বাদ। এই দিন থেকে আমি আরও বেশি পরিশ্রম করে হাতপাখা তৈরির কাজটাই করতে লাগলাম আজ সেই নির্বাক আশীর্বাদ পেয়ে আমি খুশি, জীবন চলছে আপন গতিতে ………