সুমিত ব্যানার্জি

সংখ্যারও শুভ, অশুভ! যেমন ২১। ২১ মানেই বিরুদ্ধতা, প্রতিস্পর্ধা, নতুনত্ব। আর ১৮ মানেই প্রতিবাদ। ঠিক একই ভাবে ১৩ একটা সংখ্যা মাত্র। অথচ কথায় বলে থার্টিন ইজ আনলাকি। বিশ্বজনীন স্বীকৃত এই তত্ত্ব। বিশ্বের অঙ্গ বলে পশ্চিমবঙ্গও এর বাইরে নয়। বাইরে নয় পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল, পূর্বতন বামেরা কিংবা বর্তমানের তৃণমূল সরকার। কথায় বলে, ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত করে। আরজি কর-এ কাদম্বিনীর ধর্ষণ, হত্যার মধ্যে দিয়ে কার্যত বাম জমানার হেতাল পারেখ কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হল তৃণমূল আমলে। মিলে গেল দুই জমানা। সৌজন্যে সেই আনলাকি থার্টিন!
সাল ১৯৯০। ক্ষমতায় তৃতীয় বামফ্রন্ট সরকার। জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রিত্ব কালের ১৩তম বছর। বঙ্গে বাম জমানার রমরমা। এর মধ্যে রাজ্যে হঠাৎই ধর্ষণ, হত্যার কালো ছায়া বাংলার আকাশকে অন্ধকারাচ্ছেন্ন করল। দিনটা মার্চের ৫ তারিখ। শহরের নামী ইংরাজি মাধ্যম স্কুল, ওয়েল অ্যান্ড গোল্ড স্মিথের ছাত্রী হেতাল পারেখের নৃশংস ধর্ষণ, খুনের ঘটনা ঘটে। গ্রেফতার হন ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার পরে ২০০৪-র ১৪ অগাস্ট ধর্ষণ, হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হল ধনঞ্জয়। দোষীর চরম শাস্তি চেয়ে পথে নেমেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য।
দিন, মাস, বছর কেটে ধনঞ্জয়ের দণ্ডের বছর ২০ পূর্তি হল চলতি মাসেই। বাম সরকার সরে গিয়ে এখন ক্ষমতায় তৃণমূল। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বাংলার রাজপাট সামলাচ্ছেন। তবে শাসকের বদল ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ কিছু বদল হয়নি। হেতালের ধর্ষণ, হত্যার ৩৪ বছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে কে জানত! বঙ্গ রাজনীতির ‘ঐতিহাসিক ৩৪’-এই ইতিহাস ফিরল নির্মম ভাবে। ‘২১-র নির্বাচনে জিতে তৃতীয় দফায় রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। জ্যোতি বসুর মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বকালেরও ১৩তম বছর। আরজি কর-এ ঘটল কাদম্বিনীর নৃশংস ধর্ষণ, হত্যার ঘটনা। ৩৪ বছর আগে যেমন গ্রেফতার হয়েছিল ধনঞ্জয় চট্টাোপাধ্যায়। সেইরকমই চলতি ঘটনাপ্রবাহে গ্রেফতার সঞ্জয় রায়। আরজি কর কাণ্ডের তদন্ত এখনও চলছে। কিন্তু এর মধ্যেও বঙ্গ রাজনীতির আনাচকানাচে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, সেদিনের ধনঞ্জয়-ই আজকের সঞ্জয়। নিন্দুকদের কথার অবশ্য সত্যাসত্য যাচাই করিনি আমরা। দোষী কে, তাও এখনও স্পষ্ট নয়। ক্রমশ ধীরে ধীরে তা স্পষ্ট হবে এমন আশা করাই যায়। ধৃত সঞ্জয় মূল অভিযুক্ত হতে পারেন, আবার নাও পারেন – কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। কিন্তু সে তদন্তের অঙ্গ। আপাতত নিন্দুকদের বক্তব্যই যে বঙ্গ রাজনীতিতে গুরুত্ব পাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। চলছে লাগাতার প্রতিবাদ। উত্তেজিত জনতা পুলিস, প্রশাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি প্রসঙ্গে দার্শনিক কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন, ইতিহাস প্রথম বার ফেরে বেদনাদায়ক হিসেবে। আর দ্বিতীয় বার প্রহসন আকারে। কাদম্বিনী কাণ্ডে রাজ্য প্রশাসন কি প্রহসনের রাস্তায় হাঁটছে? ১৩ কি শাসকের ওপরও সদয় নয়?

100 Views