অমর চক্রবর্তী, হাবরা
ফেলে দেওয়া সামগ্রী সাইকেলের চেইন, রান্নার গ্যাসের বার্নার, তালা, বাতিল যন্ত্রপাতি, লোহার জাল, ঠান্ডা পানীয়ের বোতলের ছিপি ইত্যাদি দিয়ে ১৫০ কুইন্টাল ওজনের দুর্গামূর্তি গড়েছেন হাবরা বাণীপুরের ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার। এক একটি দেবদেবীর মুখমন্ডল তৈরি হয়েছে এক একটি ধাতু দিয়ে। ব্যবহার করা হয়েছে অষ্টধাতু। দেবী দুর্গা, লক্ষী গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী সব প্রতিমারই মুখমন্ডল তৈরি হয়েছে উত্তরপ্রদেশের এক বিশেষ ছাঁচে। মা দুর্গার অপূর্ব মুখমণ্ডল তৈরি হয়েছে তামা দিয়ে। অন্যদিকে দেবী লক্ষ্মী পেতল, সরস্বতী এ্যালমনিয়াম, গণেশ দস্তা, কার্তিক ব্রোঞ্জ এবং মহিষ তৈরি হয়েছে লোহা দিয়ে। বেদী সহ সাড়ে ১১ ফুটের অষ্টধাতুর এই দুর্গা প্রতিমার পুজো হবে ব্যারাকপুরের এভারগ্রীন ক্লাবে।
গত জুলাই মাস থেকে শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার তার বাণীপুরের বাড়িতে তৈরি করছেন এই অভিনব দুর্গা। প্রতিবছরই নতুন নতুন চমক দিয়ে থাকেন শিল্পী। এর আগেও তিনি হিরে, সোনা ও রুপোর প্রতিমা গড়েছেন। সপরিবার দুর্গা প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ লগ্নে। এবার সোনা এবং রুপোর অলংকার পরানো হবে দেবদেবীর শরীরে। তার জন্য হাবরা থানার কাছে পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন শিল্পী। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও হিরে, সোনা বা রুপোর দেবী মূর্তি তৈরি করার সময় তিনি পুলিশি নিরাপত্তা পেয়েছেন।
শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার জানান, অষ্টধাতুর কাজ করার মধ্যে বিভিন্ন কুসংস্কার জড়িয়ে থাকে। অষ্টধাতু দিয়ে কিছুই বানাতে চান না কোনও কারিগর। এতে নাকি কারিগরের নিজের ক্ষতি হয়। এই কুসংস্কার দূর করার লক্ষ্যে অষ্টধাতু নিয়ে তিনি কাজ করছেন। বিভিন্ন দেবদেবীর অপূর্ব মুখমন্ডল তৈরি করতে তাকে দিন দশেক উত্তরপ্রদেশেও থাকতে হয়। সব মিলিয়ে ব্যারাকপুরের এভারগ্রিন ক্লাবের এবারের পূজো মণ্ডপ এবং দেবদেবী আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে। এভারগ্রীনের এবারের পুজোর থিম ‘স্পন্দন’। এই থিমের মাধ্যমে গাছপালা রক্ষা করা এবং জল অপচয় বন্ধ করার আবেদন জানানো হবে। পুজো প্যান্ডেল এবং প্রতিমা সব কিছুরই পরিকল্পনা ইন্দ্রজিতের। নাওয়া খাওয়া ভুলে নিজের থিম সফল করে তুলতে পরিশ্রম করে চলেছেন ইন্দ্রজিৎ। হাতে সময় খুবই কম। শিল্পী আরও জানান, প্রতিমা এতটাই ভারি যে ক্রেন ভাড়া করে তা গাড়িতে তুলতে হবে।